এলার্জি হলো শরীরের একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া, যা সাধারণত শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন কোনো বস্তু বা উপাদানের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার ফলাফল। এলার্জি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং এর উপসর্গও ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়। অনেক সময় এলার্জি এমনভাবে প্রকাশ পায় যে তা দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধা সৃষ্টি করে। তাই এলার্জির ধরন ও কারণ সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সঠিক প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এলার্জির প্রধান ধরনের পরিচিতি
এলার্জি মূলত কয়েকটি প্রধান ধরনের ভাগ করা যায়, যা নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
খাদ্য এলার্জি
খাদ্যের কোনো উপাদানের প্রতি শরীরের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। যেমন দুধ, ডিম, বাদাম, সয়াবিন ইত্যাদি।
বায়ুজনিত এলার্জি (এয়ারবর্ন এলার্জি)
ধূলা, পরাগকণা, ফাঙ্গাস স্পোর, পশুর লোম ইত্যাদির কারণে হয়।
ঔষধ এলার্জি
কোনো বিশেষ ঔষধ গ্রহণের পর শরীরের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ছত্রাক এলার্জি
ছত্রাক বা ফাঙ্গাস থেকে সৃষ্ট এলার্জি, যা সাধারণত আর্দ্র পরিবেশে বেশি হয়।
ইনসেক্ট বাইট এলার্জি
মৌমাছি, পিঁপড়া বা অন্যান্য পোকামাকড়ের কামড় বা ডাঁটের কারণে হয়।
স্পর্শজনিত এলার্জি
কোনো নির্দিষ্ট পদার্থের স্পর্শে ত্বকে লালচে দাগ, চুলকানি বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
এলার্জির কোন ধরন সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা হল
সর্বাধিক সাধারণ এলার্জির চিকিৎসা হলো অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ ব্যবহার এবং অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকা। অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধগুলি হিস্টামিন নামক রাসায়নিকের প্রভাব কমিয়ে এলার্জির উপসর্গ যেমন চুলকানি, সর্দি, হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি উপশম করে1345।
এছাড়া, মৌসুমী অ্যালার্জি বা খড় জ্বরের ক্ষেত্রে পরিচিত অ্যালার্জেন যেমন পরাগকণা, ধূলিকণা থেকে দূরে থাকা সবচেয়ে কার্যকর উপায়4। নাক বন্ধ বা শ্বাসকষ্ট হলে নেজাল স্প্রে বা ডিকনজেস্ট্যান্ট ব্যবহার করা যেতে পারে14। ত্বকের এলার্জির জন্য হাইড্রোকর্টিসোন বা ক্যালামাইন লোশন প্রয়োগ করা হয়25।
গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপি (অ্যালার্জি শট বা সাবলিঙ্গুয়াল ট্যাবলেট) দেওয়া হয়, যা ধীরে ধীরে শরীরকে অ্যালার্জেনের প্রতি সহনশীল করে তোলে145। জরুরি অবস্থায় এপিনেফ্রিন অটো-ইনজেক্টর ব্যবহার করা হয়4।
সারসংক্ষেপে, এলার্জির সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা হলো:
অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকা
অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ সেবন
প্রয়োজনে নেজাল স্প্রে বা ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার
গুরুতর ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপি গ্রহণ
এলার্জির কোন ধরন সবচেয়ে বেশি লোকের কাছে দেখা যায়
সবচেয়ে বেশি মানুষের মধ্যে দেখা যায় মৌসুমী অ্যালার্জি, যা সাধারণত খড় জ্বর বা অ্যালার্জিক রাইনাইটিস নামে পরিচিত। এটি গাছ, ঘাস এবং আগাছার পরাগের কারণে হয় এবং এর উপসর্গ হিসেবে হাঁচি, সর্দি, চোখ চুলকানি ও নাক বন্ধ থাকা দেখা যায়56।
বিশ্বব্যাপী প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন পরাগ এলার্জিতে ভোগেন, যা প্রায়শই সবচেয়ে সাধারণ ধরনের এলার্জি হিসেবে বিবেচিত হয়6। এছাড়া ত্বকের এলার্জিও অনেক মানুষের মধ্যে সাধারণ, যেখানে চুলকানি, লালচে দাগ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়17। তবে খাদ্য এলার্জি, ঔষধ এলার্জি এবং ইনসেক্ট বাইট এলার্জির তুলনায় মৌসুমী অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি5।
সারসংক্ষেপে, মৌসুমী অ্যালার্জি বা খড় জ্বর সবচেয়ে বেশি মানুষের মধ্যে দেখা যায় এমন এলার্জির ধরন56।
ত্বকের অ্যালার্জি কোন কারণে হয়
ত্বকের অ্যালার্জি সাধারণত তখন হয় যখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম কোনো নির্দিষ্ট পদার্থকে ক্ষতিকারক হিসেবে চিনে নিয়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই ক্ষতিকারক পদার্থগুলোকে অ্যালার্জেন বলা হয়, যা হতে পারে পরাগ, গাছপালা, খাবার, নির্দিষ্ট ওষুধ, ধুলাবালু, পশুর লোম, রাসায়নিকযুক্ত ক্রিম বা সাবান, ধোয়ার ডিটারজেন্ট, পোকামাকড়ের কামড় ইত্যাদি135।
ত্বকের অ্যালার্জির প্রধান কারণসমূহ হলো:
কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস: ত্বকের সরাসরি সংস্পর্শে আসা ধুলাবালু, নিকেলের গয়না, উল বা সিন্থেটিক কাপড়, রাসায়নিকযুক্ত প্রসাধনী বা সাবান, পশুর লোম ইত্যাদি3।
একজিমা (এটোপিক ডার্মাটাইটিস): জেনেটিক ও পরিবেশগত কারণের সংমিশ্রণে হয়, যা ত্বকে প্রদাহ ও চুলকানি সৃষ্টি করে1।
পোকামাকড়ের কামড়: মৌমাছি, পিঁপড়া বা অন্যান্য পোকামাকড়ের কামড়েও ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে5।
রাসায়নিক ও পরিবেশগত উপাদান: বায়ু দূষণ, ট্যাটু, শরীরের অনুপযুক্ত খাবার, শুষ্ক ত্বক, মানসিক চাপ ইত্যাদিও অ্যালার্জির কারণ হতে পারে15।
এছাড়া ত্বকের অ্যালার্জি কখনো কখনো চিকেনপক্সের মতো সংক্রামক রোগের পরেও হতে পারে1।
সুতরাং, ত্বকের অ্যালার্জির কারণ মূলত বিভিন্ন অ্যালার্জেনের সংস্পর্শ বা গ্রহণ, যা শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতিরিক্ত সক্রিয় করে ত্বকে প্রদাহ, লালচে ভাব, চুলকানি ও ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে135।
উপসংহার
এলার্জির বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে সচেতন থাকা খুবই জরুরি। কারণ সঠিক ধরনের এলার্জি চিহ্নিত করে উপযুক্ত চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যদি আপনার এলার্জির কোনো উপসর্গ থাকে, তবে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। এতে আপনার জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং এলার্জির কারণে সৃষ্ট সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে।
এলার্জি কত ধরনের: জানুন এলার্জির প্রধান ধরন ও বৈচিত্র্য
April 21, 2025
Health
No Comments
Author
এলার্জি হলো শরীরের একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া, যা সাধারণত শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন কোনো বস্তু বা উপাদানের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার ফলাফল। এলার্জি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং এর উপসর্গও ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়। অনেক সময় এলার্জি এমনভাবে প্রকাশ পায় যে তা দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধা সৃষ্টি করে। তাই এলার্জির ধরন ও কারণ সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সঠিক প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এলার্জির প্রধান ধরনের পরিচিতি
এলার্জি মূলত কয়েকটি প্রধান ধরনের ভাগ করা যায়, যা নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
খাদ্য এলার্জি
খাদ্যের কোনো উপাদানের প্রতি শরীরের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। যেমন দুধ, ডিম, বাদাম, সয়াবিন ইত্যাদি।
বায়ুজনিত এলার্জি (এয়ারবর্ন এলার্জি)
ধূলা, পরাগকণা, ফাঙ্গাস স্পোর, পশুর লোম ইত্যাদির কারণে হয়।
ঔষধ এলার্জি
কোনো বিশেষ ঔষধ গ্রহণের পর শরীরের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ছত্রাক এলার্জি
ছত্রাক বা ফাঙ্গাস থেকে সৃষ্ট এলার্জি, যা সাধারণত আর্দ্র পরিবেশে বেশি হয়।
ইনসেক্ট বাইট এলার্জি
মৌমাছি, পিঁপড়া বা অন্যান্য পোকামাকড়ের কামড় বা ডাঁটের কারণে হয়।
স্পর্শজনিত এলার্জি
কোনো নির্দিষ্ট পদার্থের স্পর্শে ত্বকে লালচে দাগ, চুলকানি বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
এলার্জির কোন ধরন সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা হল
সর্বাধিক সাধারণ এলার্জির চিকিৎসা হলো অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ ব্যবহার এবং অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকা। অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধগুলি হিস্টামিন নামক রাসায়নিকের প্রভাব কমিয়ে এলার্জির উপসর্গ যেমন চুলকানি, সর্দি, হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি উপশম করে1345।
এছাড়া, মৌসুমী অ্যালার্জি বা খড় জ্বরের ক্ষেত্রে পরিচিত অ্যালার্জেন যেমন পরাগকণা, ধূলিকণা থেকে দূরে থাকা সবচেয়ে কার্যকর উপায়4। নাক বন্ধ বা শ্বাসকষ্ট হলে নেজাল স্প্রে বা ডিকনজেস্ট্যান্ট ব্যবহার করা যেতে পারে14। ত্বকের এলার্জির জন্য হাইড্রোকর্টিসোন বা ক্যালামাইন লোশন প্রয়োগ করা হয়25।
গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপি (অ্যালার্জি শট বা সাবলিঙ্গুয়াল ট্যাবলেট) দেওয়া হয়, যা ধীরে ধীরে শরীরকে অ্যালার্জেনের প্রতি সহনশীল করে তোলে145। জরুরি অবস্থায় এপিনেফ্রিন অটো-ইনজেক্টর ব্যবহার করা হয়4।
সারসংক্ষেপে, এলার্জির সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা হলো:
অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকা
অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ সেবন
প্রয়োজনে নেজাল স্প্রে বা ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার
গুরুতর ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপি গ্রহণ
এলার্জির কোন ধরন সবচেয়ে বেশি লোকের কাছে দেখা যায়
সবচেয়ে বেশি মানুষের মধ্যে দেখা যায় মৌসুমী অ্যালার্জি, যা সাধারণত খড় জ্বর বা অ্যালার্জিক রাইনাইটিস নামে পরিচিত। এটি গাছ, ঘাস এবং আগাছার পরাগের কারণে হয় এবং এর উপসর্গ হিসেবে হাঁচি, সর্দি, চোখ চুলকানি ও নাক বন্ধ থাকা দেখা যায়56।
বিশ্বব্যাপী প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন পরাগ এলার্জিতে ভোগেন, যা প্রায়শই সবচেয়ে সাধারণ ধরনের এলার্জি হিসেবে বিবেচিত হয়6। এছাড়া ত্বকের এলার্জিও অনেক মানুষের মধ্যে সাধারণ, যেখানে চুলকানি, লালচে দাগ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়17। তবে খাদ্য এলার্জি, ঔষধ এলার্জি এবং ইনসেক্ট বাইট এলার্জির তুলনায় মৌসুমী অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি5।
সারসংক্ষেপে, মৌসুমী অ্যালার্জি বা খড় জ্বর সবচেয়ে বেশি মানুষের মধ্যে দেখা যায় এমন এলার্জির ধরন56।
ত্বকের অ্যালার্জি কোন কারণে হয়
ত্বকের অ্যালার্জি সাধারণত তখন হয় যখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম কোনো নির্দিষ্ট পদার্থকে ক্ষতিকারক হিসেবে চিনে নিয়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই ক্ষতিকারক পদার্থগুলোকে অ্যালার্জেন বলা হয়, যা হতে পারে পরাগ, গাছপালা, খাবার, নির্দিষ্ট ওষুধ, ধুলাবালু, পশুর লোম, রাসায়নিকযুক্ত ক্রিম বা সাবান, ধোয়ার ডিটারজেন্ট, পোকামাকড়ের কামড় ইত্যাদি135।
ত্বকের অ্যালার্জির প্রধান কারণসমূহ হলো:
কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস: ত্বকের সরাসরি সংস্পর্শে আসা ধুলাবালু, নিকেলের গয়না, উল বা সিন্থেটিক কাপড়, রাসায়নিকযুক্ত প্রসাধনী বা সাবান, পশুর লোম ইত্যাদি3।
একজিমা (এটোপিক ডার্মাটাইটিস): জেনেটিক ও পরিবেশগত কারণের সংমিশ্রণে হয়, যা ত্বকে প্রদাহ ও চুলকানি সৃষ্টি করে1।
পোকামাকড়ের কামড়: মৌমাছি, পিঁপড়া বা অন্যান্য পোকামাকড়ের কামড়েও ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে5।
রাসায়নিক ও পরিবেশগত উপাদান: বায়ু দূষণ, ট্যাটু, শরীরের অনুপযুক্ত খাবার, শুষ্ক ত্বক, মানসিক চাপ ইত্যাদিও অ্যালার্জির কারণ হতে পারে15।
এছাড়া ত্বকের অ্যালার্জি কখনো কখনো চিকেনপক্সের মতো সংক্রামক রোগের পরেও হতে পারে1।
সুতরাং, ত্বকের অ্যালার্জির কারণ মূলত বিভিন্ন অ্যালার্জেনের সংস্পর্শ বা গ্রহণ, যা শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অতিরিক্ত সক্রিয় করে ত্বকে প্রদাহ, লালচে ভাব, চুলকানি ও ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে135।
উপসংহার
এলার্জির বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে সচেতন থাকা খুবই জরুরি। কারণ সঠিক ধরনের এলার্জি চিহ্নিত করে উপযুক্ত চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যদি আপনার এলার্জির কোনো উপসর্গ থাকে, তবে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। এতে আপনার জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং এলার্জির কারণে সৃষ্ট সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে।
এলার্জি কত ধরনের