বজ্রাসন


বজ্রাসন

বজ্রাসন হলো একটি প্রাচীন যোগব্যায়াম আসন, যা ‘হীরা’ বা ‘বজ্র’ আকৃতির ভঙ্গি হিসেবে পরিচিত। এটি হাঁটু মোড়ে বসে করার একটি সহজ এবং জনপ্রিয় যোগাসন, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষ উপকার সাধন করে। বজ্রাসন হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে, বিশেষ করে খাবার হজমে সহায়ক হিসেবে কাজ করে এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। এটি পেটের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে অন্ত্রের গতিবিধি নিয়মিত রাখে, ফলে বদহজম, গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে125

বজ্রাসন

বজ্রাসনের মাধ্যমে হাঁটু ও গোড়ালির ব্যথা কমে, অনিদ্রা দূর হয়, কোমর ও কাঁধের ব্যথা উপশম পায়। এটি পায়ের পাতার অসারতা দূর করতে সাহায্য করে এবং আথ্রাইটিসের সম্ভাবনাও কমায়। নিয়মিত বজ্রাসন করলে শরীরের মেরুদণ্ড সোজা থাকে, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে এবং ঘুমের মান উন্নত হয়। এছাড়া, এটি মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমাতেও সহায়ক2456

বজ্রাসন করার পদ্ধতি সহজ: হাঁটু ভেঙে পায়ের পাতা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে গোড়ালির উপরে নিতম্ব রেখে সোজা পিঠ নিয়ে বসতে হয়। হাত হাঁটুর ওপর রেখে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এই ভঙ্গি ২-৩ মিনিট থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে সময় বাড়ানো যায়27

সার্বিকভাবে বজ্রাসন একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল যোগব্যায়াম ভঙ্গি, যা শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এটি যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য উপযুক্ত এবং বিশেষ করে খাবারের পরে এই ভঙ্গি করলে হজমে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়15। নিয়মিত বজ্রাসন অনুশীলন করলে দৈনন্দিন জীবনে শরীর ও মনের ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হয়।

বজ্রাসন করার সঠিক পদক্ষেপসমূহ নিম্নরূপ:

  1. সমতল ও আরামদায়ক স্থানে যোগ মাদুর বা ম্যাট বেঁধে বসুন।

  2. হাঁটু গেড়ে বসুন, হাঁটু দুটি একে অপরের সাথে লেগে থাকবে।

  3. পায়ের পাতা মাটির সাথে মিশিয়ে রাখুন এবং গোড়ালির উপর আপনার নিতম্ব বা বাছুরের হাড় বসান।

  4. পায়ের বড় আঙ্গুলগুলি একে অপরকে স্পর্শ করবে এবং গোড়ালি মাটির সাথে থাকবে।

  5. দুই হাতের তালু হাঁটুর ওপর সোজা করে রাখুন।

  6. মেরুদণ্ড সোজা ও লম্বা রাখুন, মাথা সোজা এবং চিবুক মাটির সমান্তরাল অবস্থায় থাকবে।

  7. ধীরে ধীরে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন এবং ৩-৫ মিনিট বা আরামমতো সময় ধরে বজ্রাসন স্থির রাখুন।

  8. যদি হাঁটু বা গোড়ালিতে ব্যথা বা অস্বস্তি হয়, তাহলে হাঁটুর নিচে বা গোড়ালির নিচে বালিশ বা প্যাডিং ব্যবহার করতে পারেন।

  9. বজ্রাসন থেকে বেরোতে ধীরে ধীরে পা সোজা করুন এবং শরীর শিথিল করুন।

এই পদক্ষেপগুলো বজ্রাসন করার সময় শরীরের সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করে এবং আঘাত বা অস্বস্তি এড়াতে সাহায্য করে1246। নিয়মিত অনুশীলনে বজ্রাসন হজমশক্তি বৃদ্ধি, পায়ের গোড়ালি ও হাঁটুর ব্যথা কমানো, মানসিক শিথিলতা আনার মতো উপকার সাধন করে।

বজ্রাসন করার সময় সাধারণত ৩ থেকে ৫ মিনিট ধরে বসা উচিত, বিশেষ করে খাবারের পরে হজমে সহায়তার জন্য। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হলে এই সময় ১৫ মিনিট পর্যন্ত বাড়ানো যায়46। নতুন যারা বজ্রাসন শুরু করছেন, তাদের জন্য ৩০ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট পর্যন্ত সময় রাখা ভালো এবং ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে হবে2। নিয়মিত অনুশীলনে ৫ থেকে ১০ মিনিট বজ্রাসনে থাকা স্বাস্থ্য উপকারিতা বৃদ্ধি করে এবং প্রয়োজনে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় বাড়ানো যেতে পারে6। তবে, কোনো অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করলে সময় কমিয়ে বা পরামর্শ নিয়ে অনুশীলন করা উচিত।

বজ্রাসন

বজ্রাসন করার সময় শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে এবং গভীর শ্বাস নেওয়া উচিত। মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া এড়িয়ে চলুন এবং স্বাভাবিক, নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস বজায় রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস নাক দিয়ে নেওয়ার ফলে মন শান্ত থাকে এবং আসনের উপকারিতা বৃদ্ধি পায়46। বজ্রাসনে বসে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন, যা শরীর ও মনের শিথিলতা ও স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করে14

বজ্রাসন একটি সহজ অথচ অত্যন্ত কার্যকর যোগব্যায়াম আসন, যা শরীরের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি, পায়ের গোড়ালি ও হাঁটুর ব্যথা কমানো, মানসিক চাপ হ্রাস এবং মেরুদণ্ডের সঠিক অবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করে। সঠিক পদ্ধতিতে নিয়মিত বজ্রাসন অনুশীলন করলে শরীর ও মনের সুস্থতা নিশ্চিত হয় এবং দৈনন্দিন জীবনে শক্তি ও সতেজতা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিদিন কিছু সময় বজ্রাসনের জন্য বরাদ্দ করে এই প্রাচীন যোগব্যায়াম আসনটির উপকারিতা গ্রহণ করা উচিত।